পটুয়াখালীঃ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সফল উদ্যোক্তা কৃষি অনুষদের ষষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নওগাঁর যোবায়ের আহমেদ নীল৷ পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি এখন কাজ করছেন ফলের রাজা আম নিয়ে।
শুরুটা কিভাবে হলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শুরুটা বলতে গেলে করোনার সময় যখন চারিদিকের পথ বন্ধ বাবাও একটা প্রাইভেট স্কুল এ জব করত বেতন পেত না ঠিক সেই মুহূর্তে ভাবা নিজের কিছু একটা করা উচিত। তারপর সেই ২০২০ সাল থেকে শুরু করলাম।আসলে ফ্যামিলি ক্রাইসিসই মূলত শুরুর কারণ। তবে নিজের আর্থিক স্বচ্ছলতা আর বাংলাদেশের চাকরির বাজার ভয়াবহ অবস্থা দেখে মনে হয়েছে নিজে একজন উদ্যোক্তা হই। মূলত সেই কারণ এ। আর মার্ক জাকারবার্গ থেকে শুরু করে ইলন মাস্ক এইসব মানুষ গুলো আমাকে বিজনেস এর দিকে মোটিভেট করেছে।’
আপনি যেহেতু শিক্ষার্থী ব্যবসার ফান্ড জোগাড় করলেন কিভাবে এটা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রথমে একদম ই ফান্ড ছিলো না। জাস্ট আইডিয়াটা মাথায় আসলো এবং ফেসবুক এ মার্কেটিং করলাম। সেই থেকে শুরু। তবে সেই ফেসবুকের মার্কেটিং থেকে কিছু আম বিক্রি হতো। যা থেকে কিছু লাভ হতো। এই লাভ থেকেই ফান্ড আসতে থাকলো। লাভের সম্পূর্ণ অংশ ইনভেস্ট করে দিনে দিনে ব্যবসার পরিধি বাড়িয়েছি।’
আপনার ক্রেতা কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রথম অবস্থায় শুধু অনলাইন এ কুরিয়ার করতাম তো সেভাবে তেমন একটা আশানুরূপ সাফল্য আসছিলো না। তারপর অফলাইন অনলাইন সরবারহ শুরু করলাম। পাইকারি কেনা বেচা শুরু করলাম। বর্তমানে mango fusion নামে একটা পেজ খুলেছি অনলাইন এর জন্য আর অফলাইনে তো চালিয়ে যাচ্ছি কার্যক্রম । কুরিয়ার এর মাধ্যমে সারাদেশে নিজস্ব বাগান থেকে কার্বাইড মুক্ত আম সরবারহ করে থাকি৷ আমাদের নওগাঁর সাপাহার বাজারেই আমার সব কার্যক্রম সম্পাদন করে থাকি৷ বর্তমানে আড়ৎ ও নিয়েছি।’
লাভ-ক্ষতি কেমন হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শুরুর দিকে খুব একটা লাভ না হলেও ধীরে ধীরে পরিচিতি বাড়ার সাথে সাথে লাভের গ্রাফও ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। গত বছর আমের মৌসুমে ২ টন আম তিনি সারা বাংলাদেশের সরবরাহ করেন।এবং সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় দেড় লক্ষ টাকার মতো লাভ করেন। তার বর্তমান মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রা পাইকারি ও খুচরা মিলিয়ে ৮ টন আম সরবরাহ করা। এছাড়াও এই সেক্টরে কাজ করছেন অনেক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বেকার যুবক যারা সারাবছরই আমের বাগান দেখাশুনা ও পরিচর্যা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ছাত্র বলে আমি একটি অপরচুনিটি পেয়েছিলাম তাই এটিকে আমি সর্বোচ্চ ভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি।’
তার স্বপ্ন কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেশের প্রতিটি জেলায় একদিন আমার আম সরবরাহ হবে। সরাসরি বাগান থেকে যেকোনো ধরনের মেডিসিন মুক্ত নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত আম সারা দেশের স্বাস্থ্যসচেতনদের নিকট পৌঁছে দিতে চাই। সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। কাজ নিয়ে আরো বেশি জ্ঞান আহরণ করে দক্ষ হতে চাই যাতে করে সকল ধরণের বাধা মোকাবেলা করে নিজের একটি অবস্থান তৈরি করতে পারি।’
নতুনদের জন্য তিনি বলেন, ‘এই সেক্টরটি খুব ঝুঁকিপূর্ণ। সচেতন থাকতে হবে যথেষ্ট পরিমাণে। আম সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান ছাড়া এই সেক্টরে আসা অনুচিত। সবসময় ক্রেতার স্যাটিসফেকশনের চিন্তা মাথায় রাখতে হবে। পর্যাপ্ত জ্ঞান ছাড়া এই সম্ভাবনাময় সেক্টরে আসলে হোঁচট খাওয়ার শঙ্কাই বেশি বলে মনে করেন তিনি।’
সাব্বির হোসেন/বুইউ